পরিচয়ে বিভ্রান্তি (ফটো ব্লগ- ৫)

সঠিক নামটি না জানলে কিংবা কোন নির্দিষ্ট নাম না থাকলে তা নিয়ে আমাদের প্রায়শই বিভ্রান্তিতে পড়তে হয়। বিশেষ করে যারা নবাগত তাদের কথাবার্তা তো রীতিমতো অন্যদের মজা দেয়। এবারে জেনে নেই জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের এ রকম কিছু পরিচয় বিভ্রান্তির কথা। 


ডেইরি গেট:



বিষয়টি খুবই দুঃখজনক যে, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো স্বনামধন্য একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের কোন নামকরণ করা হয়নি। শিক্ষক-শিক্ষার্থীসহ সকলেই এই ফটককে ডেইরি গেট নামে ডাকেন। প্রধান ফটক সংলগ্ন ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের ঠিক বিপরীত পাশে অবস্থিত একটি ডেইরি ফার্মের পরিচয়েই প্রধান ফটকের পরিচিতি পেয়েছে! এতে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা পরিচয় দিতে গিয়ে বিভিন্ন সময়ে পড়েন অসস্তিতে। আর পরিচয় নিয়ে বিপাকে পড়েন বাইরে থেকে বেড়াতে আসা লোকেরা।



বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের ঠিক বিপরীত পাশে অবস্থিত এই কেন্দ্রীয় গো-প্রজনন ও দুগ্ধ খামার তথা ডেইরি ফার্মের পরিচয়েই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান গেটের পরিচিতি। প্রধান ফটকের নামকরণের বিষয়ে শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন সময়ে দাবি জানিয়ে আসছেন।  

জয় বাংলা গেইট:


বিশ্ববিদ্যালয়ের অপর একটি গুরুত্বপূর্ণ ফটক হল জয় বাংলা গেইট। তবে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের অধিকাংশই এই ‍সুন্দর নামটি ব্যবহার করেন না। কিছু আছেন এমন যারা প্রকৃত নামই জানেন না। গেট লাগোয়া প্রান্তিক জেনারেল স্টোর নামের একটি দোকানের নামেই এই ফটকের পরিচিতি পেয়েছে প্রান্তিক গেইট নামে। সাম্প্রতিক তোলা এ ছবিতে দেখা যায়, ফটকে প্রকৃত নাম সংবলিত কোন নাম ফলকও নেই। 

ছবিটি গত বছরের। সে সময় ফটকে জয় বাংলা গেট লেখা একটি দৃষ্টি আকর্ষণী ফলক ছিলো, যেটি এখন সরিয়ে ফেলা হয়েছে। গেইটটিতে বর্তমানে প্রকৃত নাম সংবলিত কোন নাম ফলক নেই যা দিয়ে সবাই নামের বিষয়টা জানতে পারবে।   

শহীদ মিনার:


বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যতম সুন্দর স্থাপনা এই শহীদ মিনার। স্থপতি রবিউল হুসাইনের নকশায় নির্মিত এই ত্রি-স্তম্ভের স্থাপনাটি শহীদ মিনারের সাধারণ ধারণার সাথে মিলে না। ফলে অনেকেই প্রথমবারে এটাকে শহীদ মিনার ভাবতে ভুল করেন। এই নকশার রয়েছে একটা সুন্দরতম তাৎপর্য। দেশ-বিভাগোত্তর আমাদের জাতীয় জীবনের স্বাধীনতা-অভিমুখী নানা আন্দোলনে তাৎপর্যমণ্ডিত ৮টি বছর- ১৯৪৭, ১৯৫২, ১৯৫৪, ১৯৬২, ১৯৬৬,১৯৬৯, ১৯৭০ এবং ১৯৭১ কে স্মরণ করে এই স্থাপনাটি নির্মাণ করা হয়েছে। 

অমর একুশ: 


অমর একুশে ফেব্রুয়ারির চেতনায় নির্মিত বিশ্ববিদ্যালয়ের অপর একটি ভাস্কর্যের নাম অমর একুশ। এর নামের বানান নিয়ে অনেকে পড়েন বিভ্রান্তিতে। একটি অংশ অমর একুশ এর স্থলে এঁকে ডাকেন অমর একুশে বলে। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটক থেকে কিছুদূর গেলেই দেখা মিলবে এই স্থাপনাটির। গায়ে বড় করে লেখাও আছে সঠিক বানানটি। তবুও অনেকেই এই ভুল বানানকেই সঠিক বলে জানেন!  

কলা ও মানবিকী অনুষদ ভবন:


বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক ভবনগুলোর মধ্যে ব্যস্ততম একটি ভবন হল কলা ও মানবিকী অনুষদ ভবন। সাতটি বিভাগ সংবলিত এ ভবনটি ক্যাম্পাসের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের কাছে নতুন কলা ভবন নামেই পরিচিত। বিভাগ এবং শিক্ষার্থী সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম নির্মিত কলা ভবন থেকে কয়েকটি বিভাগকে স্থানান্তর করে কলা ও মানবিকী অনুষদ ভবন নামে নতুন একটি ভবন করা হয়। এটিকেই নতুন কলা ভবন বলে ডাকেন শিক্ষার্থীরা, আর পুরোনো ভবনকে ডাকেন পুরান কলা ভবন বলে। তবে ক্যাম্পাসবাসী জানলেও নাম নিয়ে বিপাকে পড়েন নবাগত শিক্ষার্থী, ভর্তি পরীক্ষার্থী এবং দর্শনার্থীরা। কারণ, মুখে নতুন কলা ভবন বলা হলেও ভবনের কোথাও তা লেখা নেই। ফলে সনাক্তকরণে বিপত্তি হয়। 

নামহীন স্থাপনার নামকরণ করা হলে এবং প্রকৃত নাম বলায় আমরা আরো সচেতন হলে পরিচয় নিয়ে এ ধরনের বিভ্রান্তি থাকবে না।  

Comments

Popular posts from this blog

গণমাধ্যমের রাজনৈতিক অর্থনীতি কী?

গণমাধ্যমের প্রচারণা মডেল ও ফিল্টার

সামাজিক স্তরবিন্যাস